জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীঘ্রই উদ্ধার হচ্ছে পাঁচটি হল


শীঘ্রই উদ্ধার হতে যাচ্ছে জবির বেদখলকৃত ৫টি বড় হল মাঝখানে কোন আইনি জটিলতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটলে আগামি মাসখানেকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচটি হল বুঝে পাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায় এদিকে আগামি ২০১১-২০১২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণাকে সামনে রেখে আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফলে ফের উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে জবি ক্যাম্পাস এমন আশংকা করা হচ্ছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধার আন্দোলনের ছাত্র নেতারা প্রশাসন কর্তৃক হল উদ্ধারের খবরকে প্রশাসনের একটি কৌশল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তাদের মতে, সরকারের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই এক্ষেত্রে প্রশাসনের উপর আর ভরসা করতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে বে-দখলকৃত হল উদ্ধারসহ বিতর্কিত ২৭ ধারা বাতিলের দাবিতে দেয়াল লিখন জনমত গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে হল উদ্ধার আন্দোলনের কর্মীরা শীঘ্রই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে তারা

প্রশাসন সূত্র জানায়, জবির পাঁচটি হল উদ্ধারের দোরগোড়ায় অল্প সময়ের মধ্যে হলগুলো উদ্ধার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে তবে কৌশলগত কারণে এগুলোর নাম প্রকাশ এখনই করা হচ্ছে না আগে নাম প্রকাশ করা হলে হলগুলো দখলে রাখার জন্য পাল্টা ব্যবস্থা বা ফন্দি আটতে পারে ভূমিদস্যুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশংকা করছেন হল উদ্ধারের চূুড়ান্ত কাজ শেষ হলে সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে হলগুলো বুঝে নিতে চায় কর্তৃপক্ষ এমন দাবি জবি প্রশাসনের গত বৃহস্পতিবার (২৮--২০১১) বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে জেলা প্রশাসকের (ডিসির) বৈঠক হয় বৈঠকে ইতিবাচক সারা দেয় জেলা প্রশাসন

সূত্র জানায়, বে-দখলকৃত হল উদ্ধারে সরকারও আগের চেয়ে অনেক কঠোর অবস্থানে যে কোন মূল্যে হল উদ্ধারে নির্দেশ এসেছে সরকারে উপর মহল থেকে উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের আমলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বেদখল শুরু হয় জবির অধিকাংশ হল ছিল মৌখিক দান করা সম্পত্তি আর কিছু ছিল হিন্দুদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দলিল না থাকার ফলে সুযোগটা নেয় স্থানীয় ভূমি দস্যুরা সে সময় এরশাদ প্রশাসন দখলীকরণের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পরে বিএনপির প্রথম আমলে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে হল দখল চূড়ান্ত পর্যায় লাভ করে

অন্যদিকে হল উদ্ধারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে জবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর বেদখলকৃত হল উদ্ধারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা নিয়ে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অল্প সময়ের মধ্যে পাঁচটি হল উদ্ধার হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোন হল উদ্ধার হয়নি উল্টো প্রশাসনের অবহেলায় নতুন করে ভূমি দস্যুরা একটি হলের পুন:লিজ পায় জবির বে-দখলকৃত হল উদ্ধারের জন্য সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলেও কমিটি কার্যত নিষ্ক্রিয়

হল উদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন জবির নীল দলের সদস্য সচিব দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান, . নুরোল মোমেন হল উদ্ধারের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জেএনইউ নিউজকে বলেন, হল উদ্ধার নিয়ে আমারা একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি সরকারও আমাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে আশা করি খুব দ্রুত আমরা একটা সাফল্যের মুখ দেখব তিনি বলেন, ৫টি হল অল্প সময়ের মধ্যে উদ্ধার হবে বলে আমরা আশা করছি

স্থানীয় এমপির ভূমিকা হল উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের স্থানীয় এমপির সাহায্যের দরকার আছে ক্ষেত্রে তিনি অন্য সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অশোক কুমার সাহা বলেন, পাঁচটি নয় তিনটি হল ভূমি মন্ত্রনালয় অতি দ্রুত জগন্নাথের জন্য অধিগ্রহণ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় হলগুলো অধিগ্রহণের পর আমাদের বুঝিয়ে দিবে অধিগ্রহণ মানেই আমরা ব্যবহার করতে পারব ব্যাপারটা এমন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে অনেক জটিলতা রয়েছে বর্তমান হলগুলোর অবস্থান আবাসিক এলাকায় এসব এলাকায় হল থাকলে স্থানীয়দের সাথে নানা সমস্যা হয় স্থানীয়রা হয়তো আবাসিক এলাকায় হল থাকতে দিবে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলগুলো বুঝে পাওয়ার পর কিভাবে কি করা যায় চিন্তা করবে তবে এতে সময় দরকার হবে বলে জানান তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে দেখা যায় প্রশাসনও নিশ্চিত হতে পরছেন না ঠিক কবে নাগাদ হল উদ্ধার হতে পারে তারাও একটি ধারণার মধ্য দিয়ে কথা বলছেন

হল উদ্ধার নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জবির বে-দখল হওয়া হল উদ্ধার আন্দোলনের এক নেতা বলেন, হল উদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে পারে এটা আঁচ করতে পেরে প্রশাসন নতুন করে হল উদ্ধারের কথা ছড়াচ্ছে অথচ দুই বছর আগেও তারা একই কথা বলেছিল আসলে প্রশাসনের হল উদ্ধারের এই প্রোপাগান্ডা আন্দোলন থেকে সাধারণ ছাত্রদের নিবৃত রাখার একটা কৌশল তবে হল উদ্ধারের দাবিতে শীঘ্রই জবিতে আন্দোলন হতে যাচ্ছে বলে দিনি জানান

দীর্ঘদিন ধরে হল উদ্ধারের বিষয়টি ঝুলে থাকায় একরকম বিব্রতকর অবস্থায় আছেন জবির বতর্মান ভিসি অধ্যাপক . মেসবাহউদ্দীন আহমেদ সম্প্রতি নতুন করে শহীদ আজমল হোসেন হল বেদখল হওয়ার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয় পরে উত্তেজনা প্রশমনে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের উদ্যোগে হল উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যাতে হল উদ্ধার আন্দালনের বা বাম সংগঠনগলোর নেতাকর্মীদের কোন অংশগ্রহণ ছিল না অথচ হল উদ্ধারের দাবিতে প্রথম থেকে তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছে

 হল উদ্ধারের ব্যাপারে জানতে চাইলে জবি ভিসি প্রতিবেদককে বলেন, হল উদ্ধারের জন্য আমরাতো নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছি কবে নাগাদ হল উদ্বার হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন এক মাস লাগতে পারে আবার দুই মাসও লাগতে পারে তিনি বলেন ,সরকার হল উদ্ধারের জন্য এবার নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়েছে আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে একটা কিছু হবে ঠিক উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না আগামি বাজেটকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন কর্মসূচি হাতে নিবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট নিয়েতো আমাদের কোন সমস্যা নেই আমদের সমস্যা হল নিয়ে

যদি সত্যিই উদ্ধার হয় জবির বে-দখলকৃত পাঁচটি হল তাহলে ক্ষানিক হলেও দু: গুচবে জবি শিক্ষার্থীদের অন্তত হল নেই কথার অভিশাপের বান থেকে তারা মুক্তি পাবে জবির হতভাগা শিক্ষার্থীদের ভাগ্য সত্যিই প্রসন্ন কিনা আপাতত সে দিকে তাকিয়ে থাকা বৈ আর কোন উপায় নেই দেখা যাকহল উদ্ধার হচ্ছে হচ্ছেপ্রশাসনের দেয়া আশ্বাসের বুলি বাস্তবে ফল দেয় কি না? না কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আসন্ন আন্দোলনে ফের উত্তপ্ত অস্থিতিশীল হয় জবি ক্যাম্পাস?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন