জবির আজমল হোসেন হল লিজ দেয়া হল মুক্তিযোদ্ধার নামে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আজমল হোসেন হলটি এক মুক্তিযোদ্ধার নামে এক শ’ বছরের জন্য লিজ দিল সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পশ্চিম পার্শ্বে ১৭ নং রমা কান্ত নন্দী লেনে হলটি অবস্থিত।



বর্তমানে বাড়িটিতে বাস করছেন মোশারফ হোসেন। তার ভাই আলমগীর জেএনইউ নিউজকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কখনোই এ বাড়ির এলোটমেন্ট হয়নি। অস্থায়ীভাবে তারা কিছুদিন ভোগ করেছিল। জায়গাটি সরকার আমাদের নামে লিজ দিয়েছে ১৯৯৬ সালে। আমরা ফি দিয়েছি। সরকার (জবি) আমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে সম্প্রতি। কিন্তু আমাদের পক্ষেই হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। তার কাছে আরো কিছু জানতে চাইলে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংগে যোগাযোগ করতে বলেন।



বাড়ির অন্য সদস্য মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মোহাম্মদ আলি সরকার এর স্ত্রী রোকেয়া বেগম প্রতিবেদকের সংগে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি কারো ফোন নম্বর দিতে অস্বীকার করেন। তিনি সরকারের সংগে বুঝতে বলেন। বাড়িটি এর আগে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আতিকুল্লাহ ভোগ করছিলেন।



বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধার উপ কমিটির আহবায়ক ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল মোমেন বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, আজমল হোসেন হল সহ অন্যান্য হলগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া যায়। বর্তমানে এগুলো গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনে রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান দখলদাররা যে কথা বলছে তা অসত্য। মূলত ১৯৯৬ সালে সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন দাঁড়োয়ান কারসাজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিজের নামে লিজ নিয়েছিলেন, যা ছিল অবৈধ।



তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা গণপূর্র্ত মন্ত্রণালয়ের সংগে যোগাযোগ করলে তারা ঠিক আছে আসেন, আমরা দেখছি বলে দায়সাড়া আচরণ করে। মূলত কেউ সহযোগিতা ও দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেনি। এমনকি আমাদের হল উদ্ধার কমিটির নেতারাও ঠিকমত কাজ করেনি।



হল উদ্ধার কমিটির আহবায়ক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ারা বেগম বলেন, হল উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজমল হোসেন হল অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা আমার সেটা জানা নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে সবাই সক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারছেনা। বিশেষ করে আমি আমার বিভাগের দায়িত্ব পালন শেষে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি কিন্তু আমার পক্ষে আর কতটুকু করা সম্ভব।



বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কোন নজর দিচ্ছে না। সরকারের কোন সদিচ্ছা থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারত না। তিনি হল উদ্ধার কমিটির দুর্বলতার কথাও উল্লেখ করেন।



হল উদ্ধার কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরুণ কুমার গোস্বামী, আই বিভাগের চেয়ারম্যান আলী আক্কাস, একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান আলী নূর, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, জিওগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন ও রেজাউল করিম প্রমুখ।



এদিকে, আব্দুর রহমান হল, হাবিবুর রহমান হল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় এলেও বিবাদীরা হাইকোর্টে রিট করেছেন বলে জানা যায়।



এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধার কমিটিসহ প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল না থাকায় নিদারুন কষ্টে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর বাড়িগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় এবং নতুন সমস্যা ‘ব্যাচেলর’ ভাড়া না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বানানোর জন্য সরকার নতুন জমি বরাদ্দ দেয়ার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হল অন্যদের নামে দিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে।



বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এ বিষয়ে প্রতিবাদ সভা ও আন্দোলনের ডাক দিতে পারে বলে জানা গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন